কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুনাগুন সম্পর্কে জানুন

কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল।এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus Heterophyllus এবং ইংরেজিতে Jackfruit নামে ডাকা হয়। কাঁঠাল খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় ছোট, বড়, আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা প্রায় সকলেই কাঁঠাল খেতে পছন্দ করে তাই আমরা এই আর্টিকেলটিতে কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। 
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আরো জানতে পারবেন কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয়, কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম, কাঁঠাল খাওয়ার পর কোন খাবার খাওয়া উচিত নয় এবং কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা ও কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম তাহলে আর দেরি কেন এখনিই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরোও পড়ুনঃ  কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুনাগুন সম্পর্কে জানুন  

.
 

ভূমিকা

মানব দেহকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে থাকি এর একটাই কারণ যাতে দেহের মধ্যে ভিটামিন, মিনারেল, নিউট্রিয়েন্ট ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। আর কাঁঠাল এমন একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ শর্করা প্রোটিন ভিটামিন ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ফসফরাস পটাশিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ। 
যা আমাদের দেহে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কাঁঠালের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন যা আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই কাঁঠালের এ সকল গুণের কথা চিন্তা করে প্রত্যেকেরই খাদ্য তালিকায় কাঁঠাল রাখা উচিত।

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ

কাঁঠাল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। রসালো ও সুমিষ্ট ফল হিসেবে কাঁঠাল অতুলনীয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠালের রয়েছে -প্রোটিন-১ গ্রাম, ভিটামিন এ-২২৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম- ৩৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি-৬.৭ মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট -২৪ গ্রাম, বায়াটারি ফাইবার -২ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম- ৩৭ মিলিগ্রাম, ক্যালোরি- ৯৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস -৩০৩ মিলিগ্রাম, খনিজ পদার্থ- ১.১ গ্রাম, কিলোক্যালরি-৪৮, আমিষ- ১.৮ গ্রাম, শর্করা- ৯.৯ গ্রাম, ভিটামিন বি-১=.১১ মিলিগ্রাম, লৌহ-০.৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম -২০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন-৪৭০০ মাইক্রগ্রাম, আশ- ০.২ গ্রাম, জলীয় অংশ -৮৮ গ্রাম, চর্বি -০.১ গ্রাম,পটাশিয়াম, আয়রন সহ রয়েছে আরো অনেক নিউট্রিয়েন্ট। কাঁঠালের মধ্যে থাকা প্রোটিনে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড।এছাড়াও কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল যা আমাদের দেহের জন্য খুবিই উপকারী।

কাঁঠালের উপকারিতা

কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুনাগুন এইসব বিষয়ে মধ্য থেকে এখন আমরা আলোচনা করব কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। আর এই রসালো ফল কাঁঠাল যেমন স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় ঠিক তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন মিনারেল ও নিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা অনেকেই কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। কাঁঠালের প্রচুর উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও অবশ্যই আমাদেরকে পরিমাণ মতো কাঁঠাল খেতে হবে। তাহলে আর দেরি কেন চলুন কাঠালের উপকারিতা গুলো কি কি জেনে নেয়া যায়।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখেঃ কাঁঠালের উপকারিতা অনেক।কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ এবং বিটা ক্যারোটিন উপাদান যা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিনের অভাবে আমাদের চোখে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন-রাতকানা রোগ, চোখে কম দেখা, দূরের জিনিস ঝাপসা দেখা, কাছের জিনিস দেখতে না পাওয়া ইত্যাদি সমস্যার জন্য কাঁঠাল খুবই উপকারী খাদ্য হিসেবে পরিচিত। তাই চোখের দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখার জন্য আমাদের কাঁঠাল খাওয়া উচিত।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করেঃ কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে অধিক মাত্রায় ফাইবার বা আঁশ যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এবং স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। কারণ স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য হজমশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাবার খাওয়ার পর সেই খাবার যদি আমাদের পেটের মধ্যে হজম না হয় তাহলে এর প্রভাব আমাদের দেহের উপর পড়ে ফলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই হজম শক্তি বৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য কাঁঠাল অত্যন্ত উপকারী খাদ্য।

ব্লাডপ্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ কাঁঠালের মধ্যে বিদ্যমান খুবিই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পটাশিয়াম ও সোডিয়াম যা ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যকে স্বাভাবিক করে এবং উচ্চ রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। এছাড়াও কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন যা লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং রক্ত বৃদ্ধি করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

ওজন কমায়ঃ দেহের ওজন কমানোর জন্য কাঁঠাল খুবিই উপকারী খাদ্য। কাঁঠালের ভিতরে ক্যালোরি ও চর্বি জাতীয় উপাদান খুব কম থাকে। এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা মেটাবলিজমকে স্বাভাবিক রাখে এবং দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না। এছাড়াও ফাইবার এমন একটি উপাদান যা অধিক সময় ধরে আমাদের পেটকে ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খেতে হয় বিধায় আমাদের ওজন কমতে থাকে। তাই বলা যায় ওজন কমানোর জন্য কাঁঠাল খুবিই কার্যকরী খাদ্য।

হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করেঃ কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের হাড়কে শক্তিশালী ও মজবুত করতে সাহায্য করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ কাঁঠালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। আর এই ভিটামিন-সি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঁঠাল খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ অনেকেই ভাবতে পারেন কাঁঠাল খেলে ডায়াবেটিস বারে আসলে কথাটা আংশিক ঠিক কারণ পরিমাণমতো কাঁঠাল খেলে এর মধ্যে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, নিউট্রিয়েন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ যা আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করার মাধ্যমে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। আর এ সকল উপাদান আমাদের দেহের জন্য খুব উপকারী।

দাঁত কে মজবুত করেঃ কাঁঠালের রয়েছে অধিক পরিমাণে ভিটামিন-সি যা দাঁত এবং দাঁতের মাড়ি কে শক্ত ও মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ কাঁঠালের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার ও আলসারের ঝুঁকি কমায় এবং দেহের ভিতর থাকা ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেলসের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

কাঁঠাল খেলে কি উপকার হয় / কাঁঠাল গাছের ঔষধি গুন

  • কাঁঠাল গাছের শিকড়ের রস হাঁপানি রোগের কার্যকরী ওষুধ।
  • জ্বর, ডায়রিয়া ও চর্মরোগের জন্য কাঁঠাল গাছের শিকড়ের রস খুবই উপকারী।
  • কাঁঠাল খাওয়ার ফলে মনের দুশ্চিন্তা ও ভয় দূর হয়ে যায়।
  • কাঁঠাল খাওয়ার ফলে পাইলসের সমস্যা ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।
  • প্রেগনেন্ট বা গর্ভবতী মহিলাকে কাঁঠাল খাওয়ালে গর্ভের বাচ্চা যথেষ্ট পুষ্টি পায়।
  • দুগ্ধ প্রদানকারী মাকে কাঁঠাল খাওয়ালে পর্যাপ্ত ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়। ফলে দুধের পরিমাণ বাড়ে এবং বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণে দুধ পান করতে পারে।
  • ছয় থেকে সাত মাস বয়সী বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি কাঁঠালের রস বা কাঁঠাল খাওয়ালে বাচ্চার পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।

কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয় / কাঁঠালের অপকারিতা

কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুনাগুন ইত্যাদি বিষয়গুলোর মধ্যে এখন আমরা কাঁঠালের অপকারিতা এবং কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয় এই সম্পর্কে জানব। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এই ফল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও অত্যন্ত সুমিষ্ট হওয়ায় অনেকেই অধিক মাত্রায় কাঁঠাল খেয়ে থাকে। তবে আমাদের একটা জিনিস মাথায় রাখা উচিত যে অধিকাংশ খাবারের কিছু ক্ষতিকর দিক থাকে। আর এই ক্ষতি তখনিই হয় যখন আমরা কোন খাবার অধিক মাত্রায় খেয়ে থাকি। তেমনি কাঁঠালেরও কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তাহলে চলুন কাঁঠালের উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নেয়া যাক।

  • যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের কাঁঠাল না হওয়াই ভালো কারণ কাঁঠাল খেলে এলার্জির সমস্যা বাড়তে পারে। আর যদি খেতে চায় তাহলে অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় কাঁঠাল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। কারণ কাঁঠাল আঁশ জাতীয় খাবার যার ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র কাঁঠালকে সহজে হজম করতে পারেনা। তাই যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই পরিণত কাঁঠাল খেতে হবে।
  • কাঁঠালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শর্করা এবং চিনিয় উপাদান থাকার কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় কাঁঠাল খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়তে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে অবশ্যই তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মতো কাঁঠাল খাওয়া উচিত।
  • যেকোনো ধরনের অপারেশন অথবা অস্ত্র পাচারের অন্তত এক সপ্তাহ আগে কাঁঠাল খাওয়া বাদ দিতে হবে। এবং কাঁঠাল খাওয়ার পর যেকোনো ধরনের ওষুধ খেলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
  • কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে। আর এই প্রোটিন শরীরের তাপমাত্রাকে বৃদ্ধি করে তাই অধিক পরিমাণে কাঁঠাল খেলে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরে।
  • অধিক পরিমাণে কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী ও দুগ্ধপ্রদান কারী মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই তাদের সতর্কতার সহিত পরিমান মত অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাঁঠাল খাওয়া উচিত।
  • কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ এবং বিদ্যমান রয়েছে ফলে কাঁঠাল হজম হতে অনেক সময় লাগে। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যেমন-বদহজম, পেটে ব্যথা, পেট ফোলা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ইত্যাদি।
  • কাঁঠালের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট আর এই কার্বোহাইড্রেট ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমকে বৃদ্ধি করে দেয় ফলে পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি এবং হজমের সমস্যা হয়।

কাঁঠাল খাওয়ার পর কি খাওয়া যাবে না

কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুনাগুন ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা উপরে আলোচনা করেছি এখন আমরা আলোচনা করব কাঁঠাল খাওয়ার পর কি খাওয়া যাবে না এই বিষয়ে। কাঁঠাল খাওয়ার পর এমন কিছু খাবার আছে যে খাবারগুলো খেলে আমাদের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শুধু কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলেই হবে না। কাঁঠাল খাওয়ার পর কোন কোন খাবার গুলো খাওয়া যাবে না সেই খাবারগুলোর সাথেও আমাদের পরিচয় হতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কাঁঠাল খাওয়ার পর কি খাওয়া উচিত নয়।
পেঁপেঃ কাঁঠাল খাওয়ার আগে বা পরে পেঁপে খাওয়া যাবেনা। কাঁঠাল খাওয়ার পর পেঁপে খেলে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে।

দুধঃ কাঁঠাল খাওয়ার পর দুধ পান করা যাবে না। কাঁঠাল খাওয়ার পর দুধ পান করলে পেট ফুলে যেতে পারে এবং ত্বকে সাদা সাদা দাগের পাশাপাশি ফুসকুড়ি সৃষ্টি হতে পারে।

ভেন্ডি বার ঢেড়োসঃ কাঁঠাল খাওয়ার পর অধিক পরিমাণে পানি পান করা যাবে না এবং কাঁঠাল খাওয়ার পর ভেন্ডি বা ঢ্যাড়োস খাওয়া যাবেনা এতে পায়ে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।

কোল্ড ড্রিংকঃ কাঁঠাল খাওয়ার পর কোকাকোলা খাওয়া যাবেনা। কারণ কাঁঠাল ও কোকাকোলা একসঙ্গে খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। তবে কাঁঠাল খাওয়ার পর সকল প্রকার কোল্ড ড্রিংকস থেকে বিরত থাকাই ভালো।

আরোও পড়ুনঃ ডুমুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুন

পানঃ কাঁঠাল খাওয়ার পর পান খাওয়া যাবে না। কাঁঠাল খাওয়ার পর যদি পান খান তাহলে আপনার বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। অথবা মৃত্যুও হতে পারে।

মধুঃ কাঁঠাল খাওয়ার পর মধু খাওয়া যাবেনা। কারণ কাঁঠাল ও মধু একসঙ্গে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই পাকা কাঁঠাল খাওয়ার পর মধু খাওয়া উচিত নয়।

কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা

কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুণাগুণ সম্পর্কে জানলাম চলুন এবারে কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই। কাঁচা কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে ক্যারোটেনয়েড ও ফ্রেডনয়েড নামক উপাদান যা আমাদের দেহের ভিতের থাকা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে কমাতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এবং কাঁচা কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল ও নিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রকমের সংক্রামক বেধি থেকে রক্ষা করে।


এছাড়াও কাঁচা কাঁঠালের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম ও ফাইবার। পটাশিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইট এর ব্যালেন্স স্বাভাবিক রাখে ও আমাদের দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফাইবার পরিপাকতন্ত্রকে সচল ও সুস্থ রাখেন। পাকা কাঁঠালের চেয়ে কাঁচা কাঁঠালে তুলনামূলক ভিটামিন-সি এর পরিমাণ বেশি থাকে যা কোলাজেন নামক প্রোটিন বা আমি তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

আর এই কোলাজেন উপাদান আমাদের নখ, চুল, ত্বক ও দাঁতে পুষ্টি যোগায় এবং এগুলোকে শক্ত ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে। যেহেতু পাকা কাঁঠাল অনেক মিষ্টি তাই পাকা কাঁঠালের তুলনায় কাঁচা কাঁঠালে শর্করা বা চিনির পরিমাণ অনেক কম থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীও কাঁচা কাঁঠাল খেতে পারে। কাঁচা কাটালে আরো রয়েছে ভিটামিন-বি১২, আয়রন, আমিষ ও খনিজ লবণ।

যা আমাদের শরীরের ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের নার্ভ বা স্নায়ুকে পুষ্টি যোগায়। এছাড়াও কাঁচা কাঁঠাল প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় খিদে কমে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের অবশ্যই কাঁচা কাঁঠাল খাওয়া উচিত।

কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম

জাতীয় ফল কাঁঠাল খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুব কমিই পাওয়া যাবে। সুমিষ্ট রসালো ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় ছোট থেকে শুরু করে বৃদ্ধ প্রায় সকলেই কাঁঠাল খেতে পছন্দ করে। আর এই কাঁঠাল খাওয়ার কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি রয়েছে। কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম বা পদ্ধতি না জানার কারণে অনেকেই কাঁঠাল খেতে গিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। তাহলে আর দেরি কেন, চলুন কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নেই। কাঁঠাল প্রধানত দুই ভাই ভাই খাওয়া যায়। যেমন- (১)কাঁচা অবস্থায় (২)পাকা অবস্থায়

কাঁচা কাঁঠালের রেসিপি / কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম

কাঁঠাল কাঁচা হোক বা পাকা উভয়তেই প্রচুর পরিমাণে আঠা থাকে তাই আঠার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য হাতে ভালো করে সরিষার তেল মেখে নিতে হবে। তারপর ধারালো ছুরি অথবা চাকু দিয়ে কাঁঠালের মাজ বরাবর সাবধানে কাটতে হবে। এরপর কাটাযুক্ত সাল ও ভোতনা ছিলে ফেলে দেওয়ার পর কাঁঠাল বিভিন্ন ধরনের রেসিপি রান্নার জন্য প্রস্তুত।

  • কালাই, ছোলা,কালাই, ছোলা, বুট ও আলুর ডালের সঙ্গে কাঁচা কাঁঠাল রান্না করে খাওয়া যায়। আর এই রেসিপি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।
  • কাঁচা কাঁঠালের সঙ্গে পরিমাণ মতো মসলা দিয়ে সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। এভাবে সিদ্ধ করলে কাঁঠাল ও কাঁঠালের বিচি উভয় খাওয়া যায় যাওয়ার অত্যান্ত টেস্টি।
  • কাঁচা কাঁঠালের বিচি সিদ্ধ করে তারপর সেই বিচির ছাল ছাড়িয়ে পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ দিয়ে ভর্তা করলে অত্যন্ত সুস্বাদু লাগে।
  • এছাড়াও কাঁচা কাঁঠালের বিভিন্ন ধরনের রেসিপি রান্না করে খাওয়া যায়। চাইলে আপনারা বাসায় নিজের ট্রাই করে দেখতে পারেন

পাকা কাঁঠালের রেসিপি / পাকা কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম

পাকা কাঁঠাল খাওয়ার জন্য প্রথমে হাতে ভালো করে সরিষার তেল মেখে নিতে হবে। তারপর ছুড়ি বা চাকু দিয়ে অথবা হাতের আঙ্গুল দিয়ে পাকা কাঁঠালটি দুই ভাগ করে নিতে হবে। এরপর ভিতরে থাকা ভোতনা তুলে ফেলতে হবে। এবার আলাদা কোনো কাগজ বা পেপার দিয়ে কাঁঠালের ভিতরের আঠা মুছে ফেললেই পাকা কাঁঠাল খাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

  • পাকা কাঁঠালের জুস তৈরি করে খাওয়া যায়। যা খুবই পুষ্টিকর।
  • পাকা কাঁঠালের বিসি ফেলে দিয়ে। ভালোভাবে ব্লেন্ডিং করে পিঠা তৈরি করে খাওয়া যায়।
  • পাকা কাঁঠালের বিচি ফেলে দেওয়ার পর মুড়ি, খই ও ছাতুর সঙ্গে পাকা কাঁঠাল খাওয়া যায়।
  • দুধের ভাতের ও পান্তা ভাতের সঙ্গে পাকা কাঁঠাল মেখে খাওয়া যায়।
  • এগুলো ছাড়াও পাকা কাঁঠালের আরো বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করা যায় চাইলে আপনারা বাসায় চেষ্টা করতে পারেন।

লেখকের শেষ কথা

কাঁঠালের উপকারিতা ও উপকারিতা এবং গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা কি, কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয়, কাঁচা কাঁঠালের উপকারিতা, কাঁঠালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এবং আরো জানতে পারলাম কাঁঠাল খাওয়ার পর কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। তবে কাঁঠাল খাওয়ার সময় একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে কোন খাবার অতিরিক্ত খেলে সেই খাবারের প্রতিক্রিয়া আমাদের দেহে দেখা দেয়। তাই আমার পরামর্শ হলো পরিমাণ মতো কাঁঠাল খান সুস্থ থাকুন।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনারা উপকৃত এবং নতুন কোন তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে যাবেন। কারণ আমাদের এই ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য সচেতন মূলক এবং নিত্যনতুন তথ্যমূল আর্টিকেল প্রতিনিয়ত পাবলিশ করে থাকি।এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে সময় কাটানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url